প্রযুক্তি খাতে নবীন স্নাতকদের নিয়োগ অর্ধেকে নেমেছে
বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সদ্য স্নাতকদের (ফ্রেশার) জন্য চাকরির সুযোগ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। একাধিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে এই নিয়োগের হার ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অগ্রগতি এ পরিবর্তনের মূল কারণ।

নিয়োগ কমেছে, বদলেছে প্রয়োজন
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান সিগন্যাল ফায়ার জানায়, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আগে যেভাবে প্রতি বছর অনেক নবীন স্নাতককে নিয়োগ দিত, এখন সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আগে যেসব প্রতিষ্ঠানে মোট নিয়োগের ১৫ শতাংশ ফ্রেশার ছিল, এখন তা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, বলে জানিয়েছে টেকক্রাঞ্চ।
এআই এখনো দক্ষ, কমে গেছে জুনিয়রদের চাহিদা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হ্রাস শুধু সাময়িক কোনও সমস্যা নয়। বরং এআই এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছে যে, এখন অনেক জুনিয়র পর্যায়ের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এর ফলে কোম্পানিগুলো সেই পদগুলোতে আর মানুষের প্রয়োজন অনুভব করছে না।
লিংকডইনের অনিশ রামান বলেন, “আগে যেসব কাজ নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা করতেন, এখন এআই তা অনায়াসে করে ফেলছে। এতে তরুণদের জন্য সুযোগ দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।”
প্রযুক্তি জায়ান্টদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি জানান, তাদের কোম্পানিতে এআই এমন দক্ষ হয়ে উঠেছে যে, এটি এখন একজন মিড-লেভেল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মতো কাজ করতে পারছে। এমনকি তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী এক বছরের মধ্যে বড় বড় প্রকল্পের কোডও AI নিজেই লিখে ফেলবে।
গুগল প্রধান সুন্দর পিচাই বলেন, তাদের কোম্পানির নতুন কোডের ৩০ শতাংশের বেশি এআই দিয়ে তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট সিইও সত্য নাদেলা জানিয়েছেন, তাদের অভ্যন্তরীণ অনেক সফটওয়্যার প্রকল্প এখন পূর্ণাঙ্গভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হচ্ছে।
চাকরি থাকবে, তবে দক্ষতা লাগবে নতুন
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি খাতে চাকরির সংখ্যা কমছে না, বরং তার ধরণ বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে এই খাতে প্রায় ৬০ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে, যা ২০৩৪ সালের মধ্যে ৭০ লাখে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু নতুন এসব পদের জন্য AI ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি জরিপে দেখা গেছে, এখন প্রায় ৮৭% কোম্পানি AI দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থী খুঁজছে। এমনকি চারটি চাকরির বিজ্ঞাপনের মধ্যে একটি এখন AI অভিজ্ঞতাকে বাধ্যতামূলক বলেই উল্লেখ করে।
ফ্রেশারদের জন্য প্রযুক্তি খাতে চাকরি পাওয়ার আগের সেই সুযোগ এখন আর নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফলে যারা এখনও বাজারে প্রবেশ করতে চান, তাদের অবশ্যই এআই, মেশিন লার্নিং ও অটোমেশন সংক্রান্ত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ প্রযুক্তির ভাষা বদলেছে, আর সেই নতুন ভাষা বোঝার প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।