কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে নেতৃত্ব পেতে ৬৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ যুক্তরাজ্যের
বিশ্ব প্রযুক্তি দৌড়ে যুক্তরাজ্য এবার চোখ রেখেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উপর। ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে, উদীয়মান এই প্রযুক্তিতে তারা বিনিয়োগ করছে ৫০ কোটি পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩ কোটি মার্কিন ডলারের সমান। এই সিদ্ধান্তকে প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা দেখছেন ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও গবেষণার জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে।
সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, কোয়ান্টাম প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে একটি স্বনির্ভর ও টেকসই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে এই বিনিয়োগ ব্যয় করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্রিটেনকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বৈশ্বিক নেতৃত্বের আসনে বসাতে চায় বর্তমান ক্ষমতাসীন লেবার সরকার।

বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত, বাস্তব প্রয়োগে অগ্রগতি
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এমন একটি প্রযুক্তি যা প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও দ্রুত। এটির মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জটিল ওষুধ আবিষ্কার, ডেটা এনক্রিপশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সম্ভব।
ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনের অবস্থান নির্ধারণে কোয়ান্টাম সেন্সিং প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ডিমেনশিয়ার মতো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করতে কোয়ান্টাম ইমেজিং প্রযুক্তির গবেষণাও চলছে।
রাজনৈতিক সমর্থন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বার্তা
২০২৩ সালে তৎকালীন কনজারভেটিভ সরকার যে ২৫০ কোটি পাউন্ডের বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছিল, তা নিয়ে ছিল নানা সংশয়। কিন্তু নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই পরিকল্পনার মূল্যায়ন করে এখন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে এসেছে।
অক্সফোর্ড কোয়ান্টাম সার্কিটস এর অন্তর্বর্তীকালীন সিইও জেরাল্ড মুল্যালি বলেন—
“জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য স্বাধীনভাবে কোয়ান্টাম সক্ষমতা গড়ে তোলা একান্ত জরুরি।”
বিদেশি দখলের ঝুঁকি ও সরকারিভাবে প্রতিরোধ
যুক্তরাজ্যের কোয়ান্টাম খাতে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসী ক্রয় চেষ্টাও সরকারের এ বিনিয়োগ পরিকল্পনায় ভূমিকা রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অক্সফোর্ড আয়নিকস ও অক্সফোর্ড ইনস্ট্রুমেন্টসের কোয়ান্টাম ইউনিট সম্প্রতি বিদেশি মালিকানায় চলে গেছে।
এই প্রবণতা রোধে ব্রিটিশ বিজ্ঞানমন্ত্রী লর্ড প্যাট্রিক ভ্যালান্স আগেই জানিয়েছেন, সরকার চাইছে নিজেদের উদ্ভাবনী সংস্থাগুলো যেন দেশের ভেতরেই বিকাশ লাভ করে।
বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী: ইন্টারনেটের মতো আরেক বিপ্লব
ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের প্রধান নির্বাহী টম গ্রিনিয়ার বলেন—
“কোয়ান্টাম প্রযুক্তি মানবজাতির জীবনে ইন্টারনেট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতোই বড় পরিবর্তন আনবে। এটি কেবল গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বরং মানবিক কল্যাণে অগ্রগতি সাধনের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।”
ব্রিটেনের এই বড় বিনিয়োগ নিশ্চিত করছে—তারা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে দখল নিতে চায় এখন থেকেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তিকে ঘিরে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন যুক্তরাজ্যের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।