বিশ্বজুড়ে অনলাইনে উন্মুক্ত অবস্থায় চলেছে নিরাপত্তা ক্যামেরা
ঘরে বাইরে গোপন নজরদারির ঝুঁকি
ঘর বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সাধারণত সিসিটিভি ক্যামেরা বসাই যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে সেই ভিডিও ফুটেজ কাজে লাগে এবং নিরাপত্তা আরও দৃঢ় হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে এই সিকিউরিটি ক্যামেরাগুলোই হয়ে উঠছে নতুন ঝুঁকির উৎস। কারণ হাজার হাজার ক্যামেরা অনলাইনে এমনভাবে যুক্ত রয়েছে যেখানে সেগুলোর সম্প্রচার যে কেউ দেখতে পাচ্ছে একদম সরাসরি। এতে গোপনীয়তা যেমন হুমকির মুখে তেমনি সাইবার অপরাধের ঝুঁকিও বাড়ছে বহুগুণে।

সম্প্রতি সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিটসাইট একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে বিশ্বজুড়ে প্রায় চল্লিশ হাজার ওয়েব ক্যামেরা কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে সম্প্রচারিত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় চৌদ্দ হাজার ক্যামেরা রয়েছে। বাকিগুলো জাপান অস্ট্রিয়া চেক প্রজাতন্ত্র দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এই ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে হাসপাতাল এটিএম বুথ অফিস কারখানা শিশু মনিটরিং ঘর এমনকি বাসাবাড়িতে। অথচ এসব ক্যামেরার মালিকদের অনেকেই জানেন না যে তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জায়গাগুলোর ছবি ভিডিও ইন্টারনেটে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।
বিটসাইট জানায় ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগই সুরক্ষিত নয় কারণ অনেক ব্যবহারকারী ডিভাইসটি কেনার পর ডিফল্ট পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেন না। কিছু ক্যামেরায় পাসওয়ার্ড থাকলেও তার অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস বা এপিআই প্রকাশ্য থাকে ফলে ক্যামেরার নির্দিষ্ট লিংক কেউ জানলে ভিডিও দেখে ফেলতে পারে। তাছাড়া অনেক ক্যামেরার সফটওয়্যার পুরনো থাকায় নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই ধরনের দুর্বল নিরাপত্তার সুযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধীরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। অফিস বা সংস্থার ক্যামেরার মাধ্যমে তারা ভিতরের কাজ কর্ম নজরে আনতে পারে এবং তা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারে। কেউ কেউ আবার এসব ভিডিও সরাসরি ডার্ক ওয়েবের ফোরামে শেয়ার করছে কিংবা বিক্রি করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে অনেক সাইবার অপরাধী এখন অনলাইন ফোরামে কীভাবে নিরাপত্তা ক্যামেরা খুঁজে বের করে হ্যাক করা যায় সেই বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করছে। এমনকি অনেকে ক্যামেরার আইপি ঠিকানা বিক্রি করছে যেগুলোর মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার দেখতে পারা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিরাপত্তা ক্যামেরা বসানো মানেই শুধু ভিডিও রেকর্ডিং নয় বরং এটি ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কাজেই সঠিক কনফিগারেশন ছাড়া এগুলো বসানো হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন ক্যামেরা বসানোর পর অবশ্যই ডিফল্ট পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে এবং পাসওয়ার্ডটি হতে হবে শক্তিশালী ও অনুমান করা কঠিন। নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে যেন কোনো সাইবার দুর্বলতা না থাকে। এছাড়া যদি ক্যামেরাটি রিমোট অ্যাক্সেস বা ক্লাউডের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তবে সেটির অ্যাক্সেস সীমিত রাখতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার ধারণাও পাল্টে যাচ্ছে। একসময় যেসব ডিভাইস আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করত এখন সেগুলোর ভেতর দিয়েই উঁকি দিচ্ছে অপরাধীরা। তাই শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারে নয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপেই চাই সর্বোচ্চ সচেতনতা। অন্যথায় নিজের অজান্তেই আপনার ঘরের ভেতরের প্রতিচ্ছবি ছড়িয়ে পড়তে পারে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
আপনি যদি বাসা বা অফিসে নিরাপত্তা ক্যামেরা ব্যবহার করেন তাহলে এখনই পরীক্ষা করুন এটি নিরাপদভাবে সংযুক্ত আছে কিনা। যে উদ্দেশ্যে আপনি ক্যামেরা বসিয়েছেন সে উদ্দেশ্য পূরণের বদলে যদি তা হয়ে ওঠে গোপন নজরদারির হাতিয়ার তাহলে তার চেয়ে বড় ঝুঁকি আর কিছু হতে পারে না।