নতুন প্রযুক্তি

চ্যাটজিপিটির প্রতিটি প্রশ্নে খরচ হয় এক চা চামচের ১৫ ভাগ পানি

জানালেন স্যাম অল্টম্যান

5/5 - (1 vote)

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI প্রযুক্তি যত বিস্তৃত হচ্ছে, ততই বাড়ছে এর পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ। এমন এক সময়ে, ওপেনএআই (OpenAI) প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান জানালেন চ্যাটজিপিটির প্রতি প্রশ্ন বা কমান্ডের পেছনে এক চা চামচের ১৫ ভাগের এক ভাগ পানি ব্যবহার হয়।

এই তথ্য সামনে আসার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ, এর টেকসইতা এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবহারের সম্ভাবনা।

চ্যাটজিপিটির প্রতিটি প্রশ্নে খরচ হয় এক চা চামচের ১৫ ভাগ পানি
চ্যাটজিপিটির প্রতিটি প্রশ্নে খরচ হয় এক চা চামচের ১৫ ভাগ পানি

💧 কতটুকু পানি খরচ হয়?

স্যাম অল্টম্যান জানান, প্রতিটি চ্যাটজিপিটি কমান্ড বা প্রশ্নে প্রায় ০.০০০০৮৫ গ্যালন পানি ব্যবহৃত হয়। এই পরিমাণ পানি একটি চা চামচের প্রায় ১৫ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ, আপনি যদি চ্যাটজিপিটিতে ১৫টি প্রশ্ন করেন, তবে এর পেছনে খরচ হবে একটি চা চামচ পানি।

দেখতে সামান্য মনে হলেও, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন কোটি কোটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এই সংখ্যাটি বিশাল জলখরচে পরিণত হয়।

⚡ বিদ্যুৎ খরচও কম নয়

অল্টম্যান আরও বলেন, চ্যাটজিপিটির প্রতিটি উত্তরের জন্য ০.৩৪ ওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ খরচ হয়। তুলনা করলে, এটি একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেনের এক সেকেন্ডের বিদ্যুৎ খরচ বা একটি এনার্জি সেভিং বাল্বের দুই মিনিটের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সমান।

এই শক্তি প্রয়োজন হয় মূলত ডেটা সেন্টারে থাকা বিশাল সার্ভার চালু রাখার জন্য। এসব সার্ভার AI মডেলকে সচল রাখে, কিন্তু তাদের কুলিং ব্যবস্থার জন্য পানিও লাগে প্রচুর।

❄️ কেন এত পানি প্রয়োজন?

চ্যাটজিপিটির মতো এআই মডেল চালাতে যে সব সার্ভার ব্যবহার হয়, সেগুলোর তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতেই প্রয়োজন হয় প্রচুর পানি। এই পানি মূলত কুলিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। যখন সার্ভার গরম হয়ে যায়, তখন পানি প্রবাহের মাধ্যমে সেই তাপ হ্রাস করা হয়। তাই, বড় পরিসরে AI প্রযুক্তি মানেই বিশাল জল ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদা।

📊 সমালোচনার জবাব?

স্যাম অল্টম্যান তার এই পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো এআই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে প্রতিক্রিয়া জানাতে চেয়েছেন। যদিও তিনি কিভাবে এই হিসাব করেছেন, সেই গাণিতিক পদ্ধতি বা সূত্র এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি দায়িত্বশীল বার্তা – যেন সবাই বোঝে, প্রযুক্তি যতই স্মার্ট হোক, সেটারও একটা খরচ আছে।


📉 এআই কি বিটকয়েনকেও ছাড়িয়ে যাবে?

গবেষকদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এআই প্রযুক্তি বিটকয়েন মাইনিংয়ের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। বিটকয়েন খনন ইতোমধ্যেই পরিবেশগত দিক থেকে সমালোচিত। আর এখন, চ্যাটবট ও AI টুলের দাপটে সেই খরচ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

🧴 ১০০ শব্দের ইমেইলে এক বোতল পানি!

এর আগেও এমন তথ্য উঠে এসেছিল। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিপিটি-৪ ব্যবহার করে লেখা ১০০ শব্দের একটি ইমেইলে এক বোতল পানির সমান পানি খরচ হয়। তবে সার্ভার কোথায় অবস্থিত এবং স্থানীয় আবহাওয়া কেমন, তার ওপর পানির চাহিদা নির্ভর করে।

প্রতিদিন যেসব ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা AI টুল ব্যবহার করছেন, তারা হয়তো ভাবেন না এর পিছনের পরিবেশগত খরচ সম্পর্কে। কিন্তু স্যাম অল্টম্যানের তথ্য তুলে ধরে যে, এই প্রযুক্তিরও আছে এক দৃশ্যমান পরিবেশগত ছাপ।

এখন প্রশ্ন হলো—আমরা কি ভবিষ্যতের AI ব্যবস্থাকে আরও জল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করে তুলতে পারবো? টেকসই প্রযুক্তির পথ খুঁজতে হলে, আমাদের প্রত্যেকেরই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

Related Articles

Back to top button