হোয়াটসঅ্যাপ হবে সুপার অ্যাপ! মেটার নতুন কৌশলে চমকে উঠছে প্রযুক্তি বিশ্ব
প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপকে একটি সুপার অ্যাপে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। যদিও চীনের উইচ্যাট, ভারতের পেটিএম, সিঙ্গাপুরের গ্র্যাব ও ইন্দোনেশিয়ার গোজেক সুপার অ্যাপ হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে, পশ্চিমা বিশ্বে এখনো এ ধারণা ততটা প্রতিষ্ঠিত নয়।
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মেটা চাইছে—একটি প্ল্যাটফর্মেই বার্তা আদান-প্রদান, অনলাইন পেমেন্ট, বিজনেস সার্ভিস, পণ্য কেনাবেচা, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর নানা ফিচার যুক্ত করতে। কিন্তু এ যাত্রা মোটেই সহজ নয়।\

মডুলার ডিজাইনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে যুক্ত হচ্ছে ফিচার
প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিবিডি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পল আর্মস্ট্রং বলেন, মেটা সরাসরি উইচ্যাটের মডেল অনুকরণ না করে “মডুলার ডিজাইন”-এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফিচার যুক্ত করছে। ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করেই তাদের সামনে উপযোগী ফিচার তুলে ধরা হচ্ছে। এতে ইউজার অভিজ্ঞতা আরও পারসোনালাইজড হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্বে কেন পিছিয়ে সুপার অ্যাপ ধারণা?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিশ্লেষক রস রুবিন বলেন, “পশ্চিমা বিশ্বে অ্যাপ স্টোরের কড়াকড়ি ও বিদ্যমান বড় অ্যাপগুলোর দাপট নতুন সুপার অ্যাপের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে।” যেমন, যদি হোয়াটসঅ্যাপ রাইড-শেয়ারিং যুক্ত করে, তবে সেটি সরাসরি উবার-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবে। কিন্তু উবার নিজেই চায় তার ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে।
মর্নিংস্টার রিসার্চের বিশ্লেষক মালিক আহমেদ খান বলেন, “একটি সুপার অ্যাপ যদি উবারের সঙ্গে জোট না বাঁধে, তবে নিজস্ব রাইড শেয়ারিং সার্ভিস তৈরি করতে হবে—যা চ্যালেঞ্জিং।”
ব্যবহারকারীর আস্থা ও তথ্যগোপনীয়তাই মেটার বড় বাধা
সুপার অ্যাপের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা থাকলেও সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ব্যবহারকারীদের আস্থা। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার গোলবেক মনে করেন, “মানুষ যেমন প্রযুক্তির সুবিধা চায়, তেমনি তারা নিজেদের আর্থিক ও ব্যক্তিগত তথ্য মেটার মতো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত।”
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ পেমেন্ট চালুর চেষ্টা করেও বড় সাফল্য আসেনি। গুগল পে এবং ফোন পে-এর মতো প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠেছে।
ফোনবার্নারের সিইও ক্রিস সোরেনসেন বলেন, “উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেট সীমিত, তাই একটি অ্যাপে সব কিছু পেয়ে যাওয়া সুবিধাজনক। তবে পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ একটি কোম্পানির অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণকে সন্দেহের চোখে দেখে।”
এআই প্রযুক্তিতে ভর করে নতুন ইকোসিস্টেম গড়তে চায় মেটা
ব্রাঞ্চ অ্যানালিটিক্সের গ্রোথ প্রধান অ্যাডাম ল্যান্ডিস মনে করেন, মেটা যদি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কমার্শিয়াল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে, তবে এআই বিশ্লেষণ দিয়ে ব্যবহারকারীদের আরও উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে OpenAI-এর মতো প্ল্যাটফর্মও সুপার অ্যাপের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
এক অ্যাপে সবকিছু—স্বপ্ন নাকি বাস্তবতা?
নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট ফর ডেটা সায়েন্সের পরিচালক ডেভিড ব্যাডার স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “মেটা হোয়াটসঅ্যাপকে সুপার অ্যাপে রূপান্তর করতে চায় এবং তারা ইতোমধ্যেই এআই, বিজনেস টুলস ও পেমেন্ট সুবিধা যুক্ত করা শুরু করেছে।”
তবে, শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জন করা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জই নির্ধারণ করে দেবে হোয়াটসঅ্যাপের সুপার অ্যাপ হয়ে ওঠার ভবিষ্যৎ।
হোয়াটসঅ্যাপ সুপার অ্যাপ পরিকল্পনা
বিষয় | বিশ্লেষণ |
---|---|
মূল লক্ষ্য | মেসেজিং-এর বাইরে কমার্স, পেমেন্ট, সার্ভিস সংযুক্ত করা |
কৌশল | মডুলার ডিজাইন, এআই ব্যবহার, ইউজার ডেটা বিশ্লেষণ |
বড় চ্যালেঞ্জ | গোপনীয়তা, আস্থা, মার্কেট প্রতিযোগিতা, রেগুলেশন |
কোথায় এগিয়ে | এশিয়ায় সুপার অ্যাপ সংস্কৃতির অনুকরণ |
কীসের ওপর নির্ভর করবে সাফল্য | ব্যবহারকারীর আস্থা ও রেগুলেটরি নীতিমালা |