২০০৩ সাল। তখনও ভিডিও কলিং মানুষের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। ঠিক সেই সময়ই আবির্ভাব ঘটেছিল স্কাইপের। একটানা দুই দশক বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে কাছের মানুষদের সঙ্গে ভিডিও ও ভয়েস কলে যুক্ত করে রেখেছিল এই প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে প্রযুক্তির ধারা। অবশেষে ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ সোমবার থেকে স্কাইপ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—এমনটাই জানিয়েছে মালিক সংস্থা মাইক্রোসফট।
স্কাইপের উত্থান: এক প্রযুক্তিগত বিপ্লব
স্কাইপ লঞ্চ হয় ২০০৩ সালে। তখন ইন্টারনেটের ব্যবহার তুলনামূলক কম হলেও, ভিডিও চ্যাটের জন্য নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এই অ্যাপটি। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, কিংবা আন্তর্জাতিক মিটিং—সবকিছুর জন্যই স্কাইপ ছিল প্রথম পছন্দ।
২০১১ সালে মাইক্রোসফট এটি কিনে নেয়। শুরু হয় নতুন রূপে স্কাইপকে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করার প্রচেষ্টা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজাইনে আনা হয় পরিবর্তন, যোগ করা হয় আধুনিক ফিচার, এমনকি যুক্ত করা হয় এআই ফিচারও।
কেন বিদায় নিতে হচ্ছে স্কাইপকে?
প্রযুক্তির দুনিয়া সদা পরিবর্তনশীল।
- হোয়াটসঅ্যাপ,
- ফেসবুক মেসেঞ্জার,
- গুগল মিট,
- জুম—এসব সহজ, দ্রুত ও বহুমুখী প্ল্যাটফর্ম বাজার দখল করে নেয়। একইসঙ্গে মাইক্রোসফট নিজেই Teams নামে একটি কর্পোরেট-ভিত্তিক ভিডিও কমিউনিকেশন টুল চালু করে, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এর ফলে স্কাইপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকে।
এক সময়ের দাপুটে অ্যাপটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে সময়ের অতলে।
স্কাইপ ব্যবহারকারীরা কী করবেন এখন?
মাইক্রোসফট আশ্বস্ত করেছে, বর্তমান স্কাইপ ব্যবহারকারীরা তাদের সমস্ত চ্যাট ও কনট্যাক্ট সহজেই Microsoft Teams-এ স্থানান্তর করতে পারবেন। এই স্থানান্তরের জন্য আগেই সময়সীমা নির্ধারিত ছিল এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।
স্মৃতির পাতায় স্কাইপ
স্কাইপ শুধু একটি অ্যাপ নয়—এটি ছিল এক আবেগের নাম। যে সময় ভার্চুয়াল যোগাযোগ এত সহজ ছিল না, স্কাইপ-ই ছিল দূরত্ব মুছে ফেলার একমাত্র ভরসা। বন্ধু, পরিবার, প্রেমিক-প্রেমিকা—সবাইকে প্রযুক্তির জগতে কাছে এনে দিয়েছিল এই প্ল্যাটফর্ম।
স্কাইপকে ব্যবহার করে কেউ বিদেশ থেকে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে, কেউ আবার জীবনের প্রথম ভিডিও ইন্টারভিউ দিয়েছে। তাই এই বিদায় কেবল একটি অ্যাপের বিদায় নয়—একটি সময়ের, একটি স্মৃতির বিদায়।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় কোনও কিছুর স্থায়িত্ব নেই। স্কাইপ তার প্রমাণ। দুই দশক মানুষের সঙ্গে থেকে একসময় যেটি প্রযুক্তির মঞ্চে রাজত্ব করেছিল, আজ সেটি নীরবে মঞ্চ ছাড়ছে।
