কিভাবে করবো

ভোটার তথ্য যাচাই ও ভোটার সিরিয়াল নাম্বার বের করার নিয়ম জেনে নিন

5/5 - (2 votes)

ভোটার হিসেবে নিজের অধিকার সম্পর্কে জানতে চান? অথবা ভোটার সিরিয়াল নম্বরটা খুঁজে বের করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? চিন্তা নেই! আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা ভোটার তথ্য যাচাই এবং ভোটার সিরিয়াল নম্বর বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। একদম পানির মতো সহজ করে বুঝিয়ে দেব, যাতে আপনি নিজেই সবকিছু করতে পারেন। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!

ভোটার হওয়াটা শুধু একটা অধিকার নয়, এটা একটা দায়িত্বও। আপনার একটা ভোট দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। আর সেই ভোট দেওয়ার আগে নিজের তথ্য যাচাই করে নেওয়াটা জরুরি। তাই, কিভাবে আপনি নিজের ভোটার তথ্য যাচাই করবেন এবং ভোটার সিরিয়াল নম্বর বের করবেন, সেই বিষয়ে ধাপে ধাপে জেনে নিন।

ভোটার তথ্য যাচাই ও ভোটার সিরিয়াল নাম্বার বের করার নিয়ম
ভোটার তথ্য যাচাই ও ভোটার সিরিয়াল নাম্বার বের করার নিয়ম

ভোটার তথ্য যাচাই ও ভোটার সিরিয়াল নাম্বার বের করার নিয়ম

ভোটার তালিকা এখন হাতের মুঠোয়! স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট থাকলে খুব সহজেই আপনি নিজের ভোটার তথ্য যাচাই করতে পারবেন। এছাড়া, যাদের স্মার্টফোন নেই, তারাও বিকল্প উপায়ে এই কাজটি করতে পারবেন। নিচে কয়েকটি সহজ উপায় আলোচনা করা হলো:

১. অনলাইন ভোটার তথ্য যাচাই

অনলাইনে ভোটার তথ্য যাচাই করাটা সবচেয়ে সহজ উপায়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এই সুবিধা দিয়েছে, যাতে সবাই ঘরে বসেই নিজের তথ্য দেখতে পারে।

ক. নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন

প্রথমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে যান: www.services.nidw.gov.bd। এই ওয়েবসাইটে আপনি ভোটার তথ্য যাচাই করার অপশনটি খুঁজে পাবেন।

খ. প্রয়োজনীয় তথ্য দিন

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, আপনাকে কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন:

  • আপনার নাম (বাংলা অথবা ইংরেজি)
  • পিতার নাম
  • মাতার নাম
  • জন্ম তারিখ
  • বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা

সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর, ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করুন।

গ. ভোটার তথ্য দেখুন

সাবমিট করার পর, আপনার ভোটার তথ্য স্ক্রিনে দেখাবে। এখানে আপনি আপনার নাম, ঠিকানা, ভোটার সিরিয়াল নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য দেখতে পারবেন। যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে সাথে সাথে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারেন।

২. এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোটার তথ্য যাচাই

যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই, তাদের জন্য এসএমএস একটি দারুণ বিকল্প।

ক. মেসেজ অপশনে যান

আপনার ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে নতুন মেসেজ তৈরি করুন।

খ. মেসেজ টাইপ করুন

মেসেজে লিখুন VN NID নম্বর এবং পাঠিয়ে দিন 16103 নম্বরে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার NID নম্বর যদি 1234567890 হয়, তাহলে আপনি লিখবেন: VN 1234567890

গ. ফিরতি মেসেজের জন্য অপেক্ষা করুন

কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি একটি ফিরতি মেসেজ পাবেন। এই মেসেজে আপনার নাম, পিতার নাম এবং ভোটার সিরিয়াল নম্বর সহ অন্যান্য তথ্য দেওয়া থাকবে।

৩. ভোটার তালিকা দেখার নিয়ম

ভোটার তালিকা দেখার কয়েকটি সহজ নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক. উপজেলা নির্বাচন অফিস

উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আপনি ভোটার তালিকা দেখতে পারবেন। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে আপনার পরিচয় দিয়ে ভোটার তালিকা দেখার জন্য অনুরোধ করুন। তারা আপনাকে সাহায্য করবেন।

খ. ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়েও ভোটার তালিকা পাওয়া যায়। আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ভোটার তালিকা দেখতে পারেন।

গ. ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়

ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়েও ভোটার তালিকা পাওয়া যায়। আপনার এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে ভোটার তালিকা দেখতে পারেন এবং সেখান থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারেন।

৪. ভোটার সিরিয়াল নাম্বার বের করার নিয়ম

ভোটার সিরিয়াল নম্বর জানাটা খুবই জরুরি। এটি ভোট দেওয়ার সময় কাজে লাগে। আপনি যদি নিজের ভোটার সিরিয়াল নম্বর বের করতে চান, তাহলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন:

  1. অনলাইনে অনুসন্ধান: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপনার NID নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য দিয়ে ভোটার সিরিয়াল নম্বর জানতে পারবেন।
  2. এসএমএস: SMS-এর মাধ্যমেও ভোটার সিরিয়াল নম্বর জানা যায়। VN লিখে স্পেস দিয়ে NID নম্বর লিখে 16103 নম্বরে পাঠাতে হবে।
  3. সরাসরি যোগাযোগ: উপজেলা নির্বাচন অফিস বা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করে ভোটার সিরিয়াল নম্বর জানতে পারবেন।

৫. ভোটার তথ্য সংশোধন করার নিয়ম

অনেক সময় ভোটার তালিকায় কিছু ভুল তথ্য থাকতে পারে। যেমন – নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ ইত্যাদি। এই ভুলগুলো সংশোধন করা জরুরি।

ক. অনলাইনে আবেদন

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভোটার তথ্য সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।

খ. সরাসরি আবেদন

সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও আপনি ভোটার তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেখানে একটি ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

গ. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভোটার তথ্য সংশোধনের জন্য কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:

  • আপনার NID কার্ডের কপি
  • জন্ম সনদের কপি (যদি জন্ম তারিখ সংশোধন করতে চান)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি নামের বানান সংশোধন করতে চান)
  • ঠিকানার প্রমাণপত্র (যদি ঠিকানা সংশোধন করতে চান)

৬. নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন

যদি আপনি এখনো ভোটার না হয়ে থাকেন, তাহলে जल्दी করে ভোটার হয়ে যান। ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে এবং সরাসরি আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।

ক. অনলাইনে আবেদন

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এর জন্য আপনার কিছু ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবি আপলোড করতে হবে।

খ. সরাসরি আবেদন

উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও আপনি নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। সেখানে একটি ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

গ. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:

  • জন্ম সনদ অথবা এসএসসির সনদ
  • পিতার এনআইডি কার্ডের কপি
  • মাতার এনআইডি কার্ডের কপি
  • ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন – ইউটিলিটি বিলের কপি)

৭. ভোটার স্থানান্তর করার নিয়ম

যদি আপনি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হন, তাহলে আপনার ভোটার এলাকাও পরিবর্তন করা উচিত।

ক. অনলাইনে আবেদন

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এর জন্য আপনার বর্তমান এবং নতুন ঠিকানার প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে।

খ. সরাসরি আবেদন

উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও আপনি ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেখানে একটি ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

গ. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে। যেমন:

  • আপনার NID কার্ডের কপি
  • নতুন ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন – ইউটিলিটি বিলের কপি অথবা বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র)

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • সবসময় নিজের ভোটার তথ্য হালনাগাদ রাখুন।
  • ভোট দেওয়ার আগে আপনার ভোটার সিরিয়াল নম্বর জেনে নিন।
  • যদি ভোটার তালিকায় কোনো ভুল থাকে, তাহলে দ্রুত সংশোধন করুন।
  • নতুন ভোটার হওয়ার জন্য जल्दी করে আবেদন করুন।
  • ভোটার এলাকা পরিবর্তন হলে, আপনার ভোটার এলাকাও স্থানান্তর করুন।

ভোটার তথ্য যাচাই ও ভোটার সিরিয়াল নাম্বার বের করার নিয়ম (FAQ)

এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনাকে ভোটার তথ্য যাচাই এবং ভোটার সিরিয়াল নম্বর বের করতে সাহায্য করবে:

ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য কি কি প্রয়োজন?

ভোটার তথ্য যাচাই করার প্রধান উপায়গুলো হলো:

  • অনলাইনে: আপনার NID নম্বর, জন্ম তারিখ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হবে।
  • এসএমএস-এর মাধ্যমে: আপনার NID নম্বর প্রয়োজন হবে।
  • সরাসরি: NID কার্ড বা NID নম্বরের প্রয়োজন হবে।

আমি কিভাবে অনলাইনে ভোটার তথ্য যাচাই করব?

অনলাইনে ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.services.nidw.gov.bd) যান এবং আপনার NID নম্বর ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান করুন।

এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোটার তথ্য যাচাই করার নিয়ম কি?

এসএমএস-এর মাধ্যমে ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য VN লিখে স্পেস দিয়ে আপনার NID নম্বর লিখে 16103 নম্বরে পাঠান।

ভোটার সিরিয়াল নাম্বার জানার গুরুত্ব কি?

ভোটার সিরিয়াল নাম্বার জানা থাকলে ভোট দেওয়ার সময় সুবিধা হয় এবং দ্রুত ভোট দিতে পারা যায়।

ভোটার তালিকায় ভুল থাকলে কিভাবে সংশোধন করব?

ভোটার তালিকায় ভুল থাকলে অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশোধনীর জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে?

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আপনার জন্ম সনদ/এসএসসি সনদ, পিতার ও মাতার NID কার্ডের কপি এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন ইউটিলিটি বিল) প্রয়োজন হবে।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার নিয়ম কি?

ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার জন্য অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে পারেন। নতুন ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

ভোটার তথ্য যাচাই করতে কত সময় লাগে?

অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে ভোটার তথ্য যাচাই করা যায়। এসএমএস-এর মাধ্যমে কিছু সময় লাগতে পারে। সরাসরি যাচাই করতে নির্বাচন অফিসের কর্মীর উপর নির্ভর করে।

আমার NID কার্ড হারিয়ে গেলে কি করব?

আপনার NID কার্ড হারিয়ে গেলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। এরপর জিডির কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন – জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ) নিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে NID কার্ডের ডুপ্লিকেট কপি পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, আপনি অনলাইনেও NID কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।

আমি কি আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভোটার তথ্য যাচাই করতে পারব?

হ্যাঁ, আপনি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভোটার তথ্যও যাচাই করতে পারবেন, যদি তাদের NID নম্বর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার কাছে থাকে।

ভোটার তথ্য যাচাইয়ের বিভিন্ন উপায়

উপায় সুবিধা অসুবিধা প্রয়োজনীয় জিনিস
অনলাইন ঘরে বসে সহজেই তথ্য যাচাই করা যায় ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হয় NID নম্বর, জন্ম তারিখ
এসএমএস ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন নেই অল্প কিছু তথ্য পাওয়া যায় NID নম্বর
সরাসরি বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় এবং সরাসরি কর্মকর্তাদের সাহায্য পাওয়া যায় সময় বেশি লাগতে পারে NID কার্ড/নম্বর

আশা করি, এই ব্লগ পোস্ট আপনাকে ভোটার তথ্য যাচাই এবং ভোটার সিরিয়াল নম্বর বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে। নিজের ভোটধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং দেশের উন্নয়নে অংশ নিন। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

Related Articles

Back to top button