পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে? ই-পাসপোর্ট ফি কত ২০২৫
আচ্ছা, পাসপোর্ট! এই শব্দটি শুনলেই কেমন যেন একটা ভ্রমণ-ভ্রমণ গন্ধ লাগে, তাই না? মনে হয় যেন ব্যাগ গুছিয়ে এক্ষুণি উড়াল দেবো কোনো অচেনা দেশে। কিন্তু পাসপোর্ট করতে গিয়েই যত বিপত্তি! কত টাকা লাগবে, কী কী কাগজপত্র লাগবে – এই সব ভাবতে বসলেই যেন উৎসাহটা একটু কমে যায়।
তবে চিন্তা নেই, আপনার পাসপোর্ট বিষয়ক সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি হাজির হয়েছি। ২০২৫ সালে ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে, জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে কী করতে হবে, সাধারণ পাসপোর্ট আর ই পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্যই বা কী – এই সবকিছু নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব। তাই, পাসপোর্ট করার আগে এই ব্লগটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, যাতে আপনার যাত্রাটা হয় আরও সহজ ও আনন্দময়।

পাসপোর্ট কি এবং কেন প্রয়োজন?
পাসপোর্ট হলো একটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দলিল। এটি আপনার জাতীয়তা এবং পরিচয় নিশ্চিত করে। অন্য দেশে যেতে হলে এই ডকুমেন্টটি অবশ্যই লাগে। শুধু ভ্রমণ নয়, অনেক সময় সরকারি বা বেসরকারি কাজেও এটি দরকার হয়। তাই, যাদের দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে, তাদের জন্য পাসপোর্ট করাটা খুব জরুরি।
পাসপোর্টের প্রকারভেদ
পাসপোর্ট মূলত দুই ধরনের হয়:
- সাধারণ পাসপোর্ট: এটি বহুল ব্যবহৃত পাসপোর্ট, যা সাধারণত নীল রঙের হয়ে থাকে।
- ই-পাসপোর্ট: এটি একটি আধুনিক পাসপোর্ট, যাতে একটি ইলেকট্রনিক চিপ সংযুক্ত থাকে। এই চিপে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন – নাম, ছবি, আঙুলের ছাপ ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকে। ই-পাসপোর্টগুলো সাধারণত সবুজ রঙের হয়ে থাকে।
ই-পাসপোর্ট ফি কত ২০২৫ (e passport fee 2025)
ই-পাসপোর্টের ফি নির্ভরসরকারি চাকরিজীবীদের ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৫ করে আপনি কেমন পাসপোর্ট চাচ্ছেন – সাধারণ নাকি জরুরি, কত পাতার পাসপোর্ট আপনার দরকার, এবং আপনার বয়স কত। নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে ২০২৫ সালের ই-পাসপোর্টের ফি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:
ই-পাসপোর্ট ফি (বয়স অনুসারে)
সাধারণ পাসপোর্ট (১৫ দিন)
পাতার সংখ্যা | মেয়াদ | সাধারণ | জরুরি |
---|---|---|---|
৪৮ পাতা | ৫ বছর | ৪,০২৫ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা |
৬৪ পাতা | ৫ বছর | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা |
৪৮ পাতা | ১০ বছর | ৫,৮৫০ টাকা | ৮,০৫০ টাকা |
৬৪ পাতা | ১০ বছর | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৯২৫ টাকা |
জরুরি পাসপোর্ট (৭ দিন)
পাতার সংখ্যা | মেয়াদ | সাধারণ | জরুরি |
---|---|---|---|
৪৮ পাতা | ৫ বছর | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা |
৬৪ পাতা | ৫ বছর | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৯২৫ টাকা |
৪৮ পাতা | ১০ বছর | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
৬৪ পাতা | ১০ বছর | ১০,৯২৫ টাকা | ১৩,২৫০ টাকা |
- এখানে উল্লিখিত ফি শুধুমাত্র পাসপোর্ট অফিসের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য কোনো মাধ্যমে (যেমন: দালাল) আবেদন করলে খরচ ভিন্ন হতে পারে।
- ফি পরিবর্তনশীল। সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে ফি পরিবর্তিত হতে পারে। তাই, আবেদন করার আগে সর্বশেষ তথ্য জেনে নেওয়া ভালো।
পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করার নিয়ম
পাসপোর্টের ফি এখন অনলাইনেও পরিশোধ করা যায়। এতে করে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা কমে যায়। অনলাইনে পেমেন্ট করার কয়েকটি উপায় নিচে দেওয়া হলো:
- অনলাইন ব্যাংকিং: অনেক ব্যাংক এখন অনলাইনে পেমেন্ট করার সুবিধা দেয়। আপনার যদি অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে আপনি সহজেই পাসপোর্টের ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
- মোবাইল ব্যাংকিং: বিকাশ, রকেট, নগদ-এর মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও ফি দেওয়া যায়।
- ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড: ভিসা, মাস্টারকার্ডের মতো ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেও আপনি ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী
পাসপোর্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং ফি পরিশোধ করতে হবে। নিচে বিস্তারিত নিয়মাবলী আলোচনা করা হলো:
অনলাইনে আবেদন
১. প্রথমে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে যান (https://www.passport.gov.bd/)।
২. “Apply Online” অপশনে ক্লিক করে অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করুন।
৩. সব তথ্য সঠিকভাবে দিন। মনে রাখবেন, ভুল তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
৪. আবেদনপত্র সাবমিট করার পর একটি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করুন।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্ট করার জন্য কিছু জরুরি কাগজপত্র লাগে। নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো:
- পূরণ করা অনলাইন আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র।
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ইউটিলিটি বিলের কপি (যেমন: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল)।
- বৈবাহিক অবস্থা অনুযায়ী marriage certificate অথবা divorce certificate এর কপি (যদি প্রযোজ্য হয়)।
- পুরনো পাসপোর্ট থাকলে তার ফটোকপি।
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য NOC (No Objection Certificate)।
- ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য আইডি কার্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে প্রত্যায়ন পত্র।
ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট
কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আপনাকে ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সাধারণত, আবেদনের সময় একটি তারিখ দেওয়া হয়, সেই তারিখ অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে এই কাজগুলো করতে হয়।
পাসপোর্ট সংগ্রহ
ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পর আপনার পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে আপনাকে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানানো হবে। এরপর আপনি পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
সাধারণ পাসপোর্ট ও ই-পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য
সাধারণ পাসপোর্ট এবং ই-পাসপোর্টের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এই পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
বৈশিষ্ট্য | সাধারণ পাসপোর্ট | ই-পাসপোর্ট |
---|---|---|
চিপ | থাকে না | থাকে |
নিরাপত্তা | কম | বেশি |
প্রক্রিয়া | সনাতন পদ্ধতি | দ্রুত এবং আধুনিক |
গ্রহণযোগ্যতা | কিছু দেশে ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে | প্রায় সকল দেশেই গ্রহণযোগ্য |
দেখতে কেমন | সাধারণত নীল রঙের হয়ে থাকে | সাধারণত সবুজ রঙের হয়ে থাকে |
ডেটা সংরক্ষণ | হাতে লেখা এবং ছবি লাগানো থাকে | চিপে সংরক্ষিত থাকে, যা জালিয়াতি করা কঠিন |
পাসপোর্ট করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
পাসপোর্ট করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখলে আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে। নিচে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো:
১. আবেদন করার আগে ভালোভাবে জেনে নিন আপনার কী কী কাগজপত্র লাগবে।
২. অনলাইনে আবেদন করার সময় খুব সাবধানে তথ্য দিন, কোনো ভুল যেন না হয়।
৩. পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরগুলোতে ফোন করে যে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে জেনে নিতে পারেন।
৪. দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে যাবেন না। এতে আপনার খরচ বাড়বে এবং প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
৫. পাসপোর্ট করার সময় সব ডকুমেন্টের অরিজিনাল কপি সঙ্গে রাখুন।
জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করার নিয়ম
যদি আপনার খুব তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট দরকার হয়, তাহলে আপনি জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ফি একটু বেশি লাগে, তবে আপনি দ্রুত পাসপোর্ট হাতে পাবেন। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করার নিয়মগুলো নিচে দেওয়া হলো:
- জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে অনলাইনে আবেদন করার সময় “Urgent” অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।
- এরপর সাধারণ নিয়মে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
- ফি পরিশোধ করার সময় জরুরি পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন।
- কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় আপনার জরুরি অবস্থার কারণ উল্লেখ করে একটি চিঠি জমা দিন।
পাসপোর্ট করতে কত দিন লাগে?
পাসপোর্ট পেতে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। তবে, জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়।
পাসপোর্ট নবায়ন করার নিয়ম
আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেটি নবায়ন করা জরুরি। পাসপোর্ট নবায়ন করার নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
- পাসপোর্ট নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন করুন।
- আবেদনপত্রে আপনার পুরনো পাসপোর্টের নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য দিন।
- নবায়ন ফি পরিশোধ করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন: পুরনো পাসপোর্টের কপি) জমা দিন।
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করবেন?
যদি আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, তাহলে দ্রুত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। এরপর জিডির কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে নতুন পাসপোর্ট পেতে সাহায্য করবে।
পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। তাই, এটি সবসময় নিরাপদে রাখুন।
পাসপোর্ট করার সময় প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন (FAQ)
পাসপোর্ট করতে গিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। নিচে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
আমার জন্ম নিবন্ধন নেই, আমি কি পাসপোর্ট করতে পারব?
হ্যাঁ, জন্ম নিবন্ধন না থাকলে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে পারবেন।
আমি কি আমার বাবার নাম ভুল করে লিখেছি, এখন কি করব?
ভুল হলে দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন এবং সংশোধনের জন্য আবেদন করুন।
ই-পাসপোর্ট কি সব দেশেই ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, ই-পাসপোর্ট প্রায় সব দেশেই ব্যবহার করা যায়।
আমি কি আমার পাসপোর্টের ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারব?
হ্যাঁ, আপনি আপনার পাসপোর্টের ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতে হবে।
আমার বয়স ১৮ বছরের কম, আমি কি পাসপোর্ট করতে পারব?
হ্যাঁ, ১৮ বছরের কম বয়স হলেও আপনি পাসপোর্ট করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগতে পারে।
পাসপোর্ট করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা থাকার কারণে ঘরে বসেই অনেক কাজ করা যায়। তবে, পাসপোর্ট করার সময় সব নিয়মকানুন ভালোভাবে জেনে এবং সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব।
আশা করি, এই পোস্ট আপনাকে পাসপোর্ট করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর যদি এই তথ্যগুলো আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।