আর্জেন্টিনা ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন? কি কি লাগবে জেনে নিন এখনই
আর্জেন্টিনার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লিওনেল মেসির পায়ের জাদু, মন মাতানো ট্যাংগো নাচ, আর বুয়েনোস আইরেসের রঙিন রাতের ঝলমলে ছবি। অনেকেরই স্বপ্ন থাকে এই সুন্দর দেশটা ঘুরে আসার। কিন্তু আর্জেন্টিনা যেতে হলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, আর সেই প্রক্রিয়াটা অনেকের কাছেই জটিল মনে হতে পারে। তাইতো, আর্জেন্টিনা ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন, কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, খরচ কেমন হবে – এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমি হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে।
ভিসা পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটিকে সহজভাবে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো, যাতে আপনি নিজেই সব কাজ করতে পারেন। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক আর্জেন্টিনা ভিসার খুঁটিনাটি।

আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য প্রস্তুতি
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য আবেদন করার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। এতে আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ হবে এবং ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
ভিসার প্রকারভেদ নির্বাচন
আর্জেন্টিনা ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসার প্রকার নির্বাচন করাটা খুবই জরুরি। সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনার জন্য এই ভিসাগুলো বেশি প্রয়োজন হয়:
- পর্যটন ভিসা: যদি শুধুমাত্র ঘোরার উদ্দেশ্য থাকে।
- ব্যবসায়িক ভিসা: ব্যবসার কাজে আর্জেন্টিনা যেতে চাইলে।
- শিক্ষার্থী ভিসা: পড়াশোনার জন্য আর্জেন্টিনায় যেতে চাইলে।
আর্জেন্টিনা ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগবে?
ভিসার জন্য আবেদনের সময় কিছু জরুরি কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এই কাগজগুলো আগে থেকে গুছিয়ে রাখলে পরবর্তীতে সুবিধা হবে। কি কি কাগজপত্র লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট (ন্যূনতম ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।
- ভিসা আবেদন ফর্ম।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আর্জেন্টিনায় থাকার হোটেলের রিজার্ভেশন অথবা থাকার আমন্ত্রণপত্র।
- যাতায়াতের টিকিট (প্লেনের)।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
- ভ্রমণ বীমা (ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স)।
- অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র (যেমন: আমন্ত্রণপত্র, চাকরির আইডি কার্ড, ইত্যাদি)।
আর্জেন্টিনা ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
আর্জেন্টিনা ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। নিচে প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে, আর্জেন্টিনার দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিসা আবেদন ফর্মটি পূরণ করতে হবে। ফর্ম পূরণের সময় সব তথ্য যেন সঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দূতাবাসে সাক্ষাতের জন্য এপয়েন্টমেন্ট নেয়া
অনলাইন ফর্ম পূরণ করার পর, আপনাকে আর্জেন্টাইন দূতাবাসে সাক্ষাতের জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। দূতাবাসের ওয়েবসাইটে সাধারণত অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার অপশন থাকে। আপনার সুবিধামতো একটি তারিখ বেছে নিন।
দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দেওয়া
সাক্ষাৎকারের দিন, আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দূতাবাসে যান। সেখানে আপনার কাগজপত্র জমা দিন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন।
ভিসা ফি পরিশোধ করা
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হয়। এই ফি দূতাবাসের নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে। সাধারণত, ভিসা ফি অনলাইনে বা সরাসরি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং সংগ্রহ
কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর, দূতাবাস আপনার আবেদনটি প্রক্রিয়াকরণ করবে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত কিছু দিন সময় লাগে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে, আপনার পাসপোর্ট এবং ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন –
- পাকিস্তানের ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন?
- অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা কিভাবে করবেন?
- ইতালি ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন?
- অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন?
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য আবেদনের সময় কি কি কাগজপত্র লাগবে, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
কাগজের নাম | বিস্তারিত তথ্য |
---|---|
পাসপোর্ট | কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে এবং অন্তত দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে। |
ভিসা আবেদন ফর্ম | দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। |
ছবি | পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে)। |
হোটেলের রিজার্ভেশন | আর্জেন্টিনার হোটেলে থাকার বুকিং-এর প্রমাণপত্র। |
প্লেনের টিকিট | আসা-যাওয়ার টিকিটের কপি। |
ব্যাংক স্টেটমেন্ট | গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, যেখানে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকতে হবে। |
ভ্রমণ বীমা | পুরো ভ্রমণকালের জন্য ভ্রমণ বীমা থাকতে হবে। |
এনওসি (NOC) | আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনাপত্তি পত্র (NOC) লাগবে। |
আমন্ত্রণপত্র | যদি কেউ আপনাকে আর্জেন্টিনা থেকে আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে সেই আমন্ত্রণপত্র লাগবে। |

ভিসা আবেদন করার সময় সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন
ভিসা আবেদন করার সময় কিছু সাধারণ ভুল আছে যা প্রায়শই দেখা যায়। এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে:
- অসম্পূর্ণ ফর্ম: ফর্মটি ভালোভাবে পূরণ করুন এবং কোনো ঘর যেন খালি না থাকে।
- ভুল তথ্য: আপনার দেওয়া সমস্ত তথ্য যেন সঠিক হয়।
- পুরোনো ছবি: সাম্প্রতিক ছবি ব্যবহার করুন।
- পর্যাপ্ত আর্থিক প্রমাণ না দেওয়া: আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকতে হবে।
- ভ্রমণ বীমা না থাকা: ভ্রমণের পুরো সময়ের জন্য বীমা করানো আবশ্যক।
আর্জেন্টিনা ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময়
আর্জেন্টিনা ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কর্মদিবস লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে। তাই, ভ্রমণের তারিখের আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করা ভালো।
আর্জেন্টিনা ভিসার খরচ
আর্জেন্টিনা ভিসার খরচ ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, পর্যটন ভিসার খরচ অন্য ভিসার চেয়ে কম হয়। আপ-টু-ডেট তথ্য পেতে, ঢাকার আর্জেন্টিনা দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আর্জেন্টিনা দূতাবাসের ঠিকানা ও যোগাযোগ
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দূতাবাসের ঠিকানা – Plot 50, Road 23, 1st Floor, Block B, Banani, Dhaka. Bangladesh, Tel: 880 255035918, E-mail: ebang@cancilleria.gov
কিছু অতিরিক্ত টিপস যা আপনার কাজে লাগবে
- আবেদনের আগে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন।
- সব কাগজপত্র আসল এবং ফটোকপি দুটোই সাথে রাখুন।
- সাক্ষাৎকারের সময় আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন এবং প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।
- আর্জেন্টিনার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছু ধারণা রাখতে পারেন, যা আপনার আগ্রহ প্রমাণ করবে।
আর্জেন্টিনা ভিসা আবেদন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য কি ইন্টারভিউ দিতে হয়?
হ্যাঁ, সাধারণত আর্জেন্টাইন দূতাবাসে ভিসার জন্য ইন্টারভিউ দিতে হয়। ইন্টারভিউতে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, আর্থিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে।
আর্জেন্টিনা ভিসা কত দিনের জন্য পাওয়া যায়?
আর্জেন্টিনা ভিসা সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ দিনের জন্য দেওয়া হয়। ভিসার মেয়াদ আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।
আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলোর মধ্যে রয়েছে: বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা আবেদন ফর্ম, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, হোটেলের রিজার্ভেশন, প্লেনের টিকিট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভ্রমণ বীমা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।
আর্জেন্টিনা ভিসার আবেদন বাতিল হলে কি করব?
যদি আপনার ভিসার আবেদন বাতিল হয়, তাহলে আপনি বাতিলের কারণ জানতে পারবেন। কারণ জেনে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যোগ করে আবার আবেদন করতে পারেন।
আমি কি আর্জেন্টিনায় গিয়ে কাজ করতে পারবো?
যদি আপনার ভিসার মেয়াদ থাকে তবেই আপনি সেখানে কাজ করতে পারবেন। অন্যথায়, পারবেন না।
আর্জেন্টিনা যেতে কি কি লাগে?
আর্জেন্টিনা যেতে আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র থাকতে হবে।
আর্জেন্টিনা টুরিস্ট ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
আর্জেন্টিনা টুরিস্ট ভিসার জন্য আপনার পাসপোর্টের কপি, আবেদনপত্র, ছবি, রিটার্ন এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং এবং আর্থিক সহায়তার প্রমাণ প্রয়োজন হবে।
আর্জেন্টিনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
আর্জেন্টিনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা আপনার জমা দেওয়া কাগজপত্রের উপর নির্ভর করে। যদি আপনার কাগজপত্র সঠিক থাকে, তবে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আর্জেন্টিনা ভিসা পেতে কত দিন লাগে?
আর্জেন্টিনা ভিসা পেতে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ দিন লাগে।
আর্জেন্টিনার ভিসা ফি কত টাকা?
আর্জেন্টিনার ভিসা ফি ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে।
আর্জেন্টিনার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার নিয়ম কী?
আর্জেন্টিনার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন আর্জেন্টাইন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে।
আর্জেন্টিনা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
আর্জেন্টিনা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেট, ভর্তির প্রমাণ, আর্থিক সহায়তার প্রমাণ এবং স্বাস্থ্য বীমা প্রয়োজন হবে।
আর্জেন্টিনার ফ্যামিলি ভিসার নিয়ম কী?
আর্জেন্টিনার ফ্যামিলি ভিসার জন্য আপনার পরিবারের সদস্যের সাথে আপনার সম্পর্কের প্রমাণ, তাদের পরিচয়পত্র এবং আর্থিক সহায়তার প্রমাণ প্রয়োজন হবে।
আর্জেন্টিনা ভিজিট ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
আর্জেন্টিনা ভিজিট ভিসার জন্য আপনার পাসপোর্টের কপি, আবেদনপত্র, ছবি, রিটার্ন এয়ার টিকিট, হোটেল বুকিং এবং আর্থিক সহায়তার প্রমাণ প্রয়োজন হবে।
আর্জেন্টিনা কি কাজের জন্য ভালো?
আর্জেন্টিনা কাজের জন্য ভালো কিনা, তা আপনার পেশা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে।
আর্জেন্টিনা যেতে কত টাকা লাগে?
আর্জেন্টিনা যেতে কত টাকা লাগে, তা আপনার ভ্রমণের সময়কাল, থাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য খরচের উপর নির্ভর করে।
আর্জেন্টিনা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায় কি?
আর্জেন্টিনা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায় হলো সঠিকভাবে আবেদনপত্র পূরণ করা এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দেওয়া।
আর্জেন্টিনা যাওয়ার সেরা সময় কখন?
আর্জেন্টিনা যাওয়ার সেরা সময় হলো বসন্তকাল (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) এবং শরৎকাল (মার্চ থেকে মে)।
আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার কি?
আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হলো অ্যাসাদো (Asado), যা গ্রিল করা মাংস। এছাড়া এমপানাদাস (Empanadas) এবং আলফাহোরেসও (Alfajores) খুব জনপ্রিয়।
মেসি কোন দেশের নাগরিক?
লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার নাগরিক।
আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে আর্জেন্টিনা ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে। যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার আর্জেন্টিনা ভ্রমণ সুন্দর হোক!