কিভাবে করবো

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি? রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কি কি?

5/5 - (1 vote)

ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে আপনাদের আগ্রহের কমতি নেই, সেটা আমি জানি। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে আপনারা অনেক প্রশ্ন করেন। তাই আজ আমি হাজির হয়েছি বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে জেনে নেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সম্পর্কে খুঁটিনাটি।

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক
বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক : এক ঝলকে

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরকারি ব্যাংকগুলোর একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পপতি পর্যন্ত, সবাই কোনো না কোনোভাবে এই ব্যাংকগুলোর সাথে জড়িত। এই ব্যাংকগুলো শুধু আর্থিক লেনদেনই করে না, দেশের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত এবং এদের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

সরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য

নিচে ব্যাংকগুলোর নাম এবং তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলো:

১. সোনালী ব্যাংক লিমিটেড (Sonali Bank Limited)

সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এই ব্যাংকের শাখাগুলো দেশের প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত, যা গ্রাহকদের জন্য লেনদেনকে সহজ করে তুলেছে।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭১
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক, দেশব্যাপী শাখা বিস্তৃত।

২. জনতা ব্যাংক লিমিটেড (Janata Bank Limited)

জনতা ব্যাংক লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। এটিও দেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটির প্রধান কার্যালয়ও ঢাকায়। এই ব্যাংক এসএমই (SME) ঋণের ক্ষেত্রে বেশ সক্রিয়।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭২
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: এসএমই ঋণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে।

৩. অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড (Agrani Bank Limited)

অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। এই ব্যাংক কৃষি এবং শিল্প উভয় খাতে ঋণ বিতরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭২
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: কৃষি ও শিল্পখাতে ঋণ বিতরণে অগ্রণী।

৪. রূপালী ব্যাংক লিমিটেড (Rupali Bank Limited)

রূপালী ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যাংক। এটিও ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময় এই ব্যাংকের সুনাম ছিল আকাশচুম্বী। বর্তমানে আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ধরে রেখেছে। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায়।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭২
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: ঐতিহ্যবাহী ব্যাংক, আধুনিক ব্যাংকিং সেবায় জোর দেওয়া হয়েছে।

৫. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (Bangladesh Development Bank Limited – BDBL)

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) শিল্পখাতে উন্নয়নের জন্য বিশেষায়িত। এটি মূলত দেশের শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সহায়তা প্রদান করে থাকে।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: পূর্বে শিল্প ব্যাংক নামে পরিচিত ছিল, পরবর্তীতে বিডিবিএল হিসেবে নামকরণ করা হয়
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানে বিশেষায়িত।

৬. বেসিক ব্যাংক লিমিটেড (BASIC Bank Limited)

বেসিক ব্যাংক লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালে। “ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণ সহায়ক সংস্থা” হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এটি এখন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৮৮
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে।

৭. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (Bangladesh Krishi Bank – BKB)

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। এটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ঋণ এবং সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই ব্যাংক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৭৩
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: কৃষিঋণ প্রদানে বিশেষায়িত।

৮. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (Probashi Kallyan Bank)

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। এই ব্যাংক মূলত বিদেশগামী শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে কাজ করে।

  • প্রতিষ্ঠাকাল: ২০১০
  • প্রধান কার্যালয়: ঢাকা
  • বৈশিষ্ট্য: প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা এবং জনগণের আর্থিক চাহিদা পূরণ করা। এই ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চয়ী হিসাব এবং ঋণ সুবিধা প্রদান।
  • কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য খাতের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা দেওয়া।
  • বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়তা করা।
  • সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করা।
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (SME) উন্নয়নে সহায়তা করা।
  • প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ঋণ এবং সহায়তা প্রদান।

সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য

সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে একটি তুলনামূলক আলোচনা দেওয়া হলো:

বৈশিষ্ট্য সরকারি ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংক
মালিকানা সরকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান
উদ্দেশ্য জনসেবা ও মুনাফা অর্জন প্রধানত মুনাফা অর্জন
নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও পরিচালনা পর্ষদ
ঋণের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম তুলনামূলকভাবে বেশি
শাখার বিস্তার দেশব্যাপী বিস্তৃত শহরকেন্দ্রিক হওয়ার প্রবণতা বেশি
কর্মসংস্থান সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ নিজস্ব নিয়োগ বিধি

সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার নিয়মাবলী

যদি আপনি সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান, তাহলে আপনাকে কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে। নিচে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো:

  • প্রথমে, আপনাকে ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে।
  • আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে (যেমন: জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, আয়কর সনদ, ইত্যাদি)।
  • ব্যাংক আপনার আবেদন যাচাই-বাছাই করে দেখবে এবং আপনার ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা মূল্যায়ন করবে।
  • যদি আপনার আবেদন स्वीकृत হয়, তাহলে আপনাকে ঋণের শর্তাবলী সম্পর্কে জানানো হবে।
  • শর্তাবলী মেনে চললে আপনি ঋণ পেতে পারেন।

সরকারি ব্যাংকের সুবিধা এবং অসুবিধা

প্রত্যেকটি বিষয়ের মতো, সরকারি ব্যাংকেরও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:

সুবিধা

  • সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ায় গ্রাহকদের আস্থা বেশি থাকে।
  • ঋণের সুদের হার সাধারণত কম হয়।
  • দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শাখা বিস্তৃত, তাই সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা সহজলভ্য।
  • কৃষি এবং ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদান করে।

অসুবিধা

  • কিছু ক্ষেত্রে সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকে।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা ধীরগতি দেখা যায়।
  • বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় প্রযুক্তির ব্যবহার কম হতে পারে।

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক – FAQs

এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা সরকারি ব্যাংক সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও স্পষ্ট করবে-

প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রথম সরকারি ব্যাংক কোনটি?

উত্তর: সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।

প্রশ্ন: কোন ব্যাংকটি কৃষি ঋণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত?

উত্তর: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)।

প্রশ্ন: সরকারি ব্যাংকগুলোতে কি অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, প্রায় সকল সরকারি ব্যাংকেই অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে।

প্রশ্ন: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: বিদেশগামী শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা এবং তাদের পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করা।

প্রশ্ন: সরকারি ব্যাংকগুলোতে কি ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposit) করার সুযোগ আছে?

উত্তর: হ্যাঁ, সরকারি ব্যাংকগুলোতে ফিক্সড ডিপোজিট করার সুযোগ আছে এবং সুদের হারও বেশ আকর্ষণীয়।

আশা করি, বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি এবং এই ব্যাংকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই ব্যাংকগুলো আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। যদি আপনার মনে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Related Articles

Back to top button