অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৫
পাসপোর্ট! এই একটা শব্দ শুনলেই কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ কাজ করে, তাই না? নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি, নতুন অভিজ্ঞতা – সব যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। আর এখন তো সবকিছু অনলাইন! ঘরে বসেই যদি পাসপোর্ট করা যায়, তাহলে আর চিন্তা কী?
২০২৫ সালে অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়মকানুন কিন্তু আগের থেকে আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই, আপনি যদি নতুন পাসপোর্ট করতে চান অথবা পাসপোর্ট রিনিউ করতে চান, এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য একদম পারফেক্ট। এখানে আমি সবকিছু step-by-step বুঝিয়ে বলব, যাতে আপনার কোনো ঝামেলা না হয়।

অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৫ : ধাপে ধাপে গাইড
পাসপোর্ট করার পুরো প্রক্রিয়াটাকে আমরা কয়েকটা ধাপে ভাগ করে নেব। এতে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে।
১. অনলাইনে আবেদন (Online Application)
প্রথমেই আপনাকে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ভাবছেন, ওয়েবসাইট কোনটা? চিন্তা নেই, আমি তো আছি! এই লিঙ্কে ক্লিক করুন: DIP Website
- ওয়েবসাইটে ঢুকে “Apply Online” অপশনটিতে ক্লিক করুন।
- এবার আপনার সামনে একটা ফর্ম আসবে। ফর্মটা মন দিয়ে পূরণ করুন। কোনো ভুল করা চলবে না কিন্তু! আপনার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ – সবকিছু যেন আপনার অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে মেলে।
- ফর্ম পূরণের সময় আপনাকে একটা ইউজার আইডি (User ID) এবং পাসওয়ার্ড (Password) তৈরি করতে হবে। এটা মনে রাখবেন, কারণ পরে এটা কাজে লাগবে।
২. Application Fee পরিশোধ করা
পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে Government Fee জমা দিতে হবে। অনলাইনে Credit Card/Debit Card অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আপনি এই ফি জমা দিতে পারবেন।
পাসপোর্ট ফি কত?
আপনার পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা (Number of Pages) এবং মেয়াদের (Validity) ওপর নির্ভর করে এই ফি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের জন্য ফি একটু কম, আর ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের জন্য ফি একটু বেশি। নিচে একটা টেবিল দেওয়া হলো, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন:
পাসপোর্টের ধরণ | মেয়াদ | পৃষ্ঠা সংখ্যা | ফি (আনুমানিক) |
---|---|---|---|
সাধারণ | ৫ বছর | ৪৮ | ৪,০২৫ টাকা |
সাধারণ | ১০ বছর | ৪৮ | ৫,৭৫০ টাকা |
জরুরি | ৫ বছর | ৪৮ | ৬,৩২৫ টাকা |
জরুরি | ১০ বছর | ৬৪ | ৯,২০০ টাকা |
(এখানে দেওয়া ফি শুধুমাত্র Indicative, পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জেনে নেওয়াই ভালো।)
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (Documents Required)
পাসপোর্ট করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে, সেটা আগে থেকে জেনে রাখলে আপনার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। নিচে একটা তালিকা দেওয়া হলো:
- অনলাইন Application Form এর প্রিন্ট কপি
- Payment Slip/ Receipt (ফি পরিশোধের প্রমাণ)
- National Identity Card (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ (Birth Certificate) এর ফটোকপি
- আপনার ছবি ( Application Form এ দেওয়া ছবির সফটকপি)
- বিদ্যুৎ বিল অথবা গ্যাস বিলের কপি (ঠিকানা প্রমাণের জন্য)
- পেশার প্রমাণপত্র (যেমন: Student ID Card, Employee ID Card ইত্যাদি)
৪. পাসপোর্ট অফিসের Appointment
Application Form পূরণ করা হয়ে গেলে এবং ফি পরিশোধ করার পর, আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার আবেদনপত্র জমা দিতে হবে এবং ছবি তুলতে হবে। এর জন্য আপনাকে অনলাইনে একটা Appointment নিতে হবে।
- পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে লগইন করে Appointment এর জন্য তারিখ এবং সময় নির্বাচন করুন।
- Appointment এর Confirm Copy টি Download করে প্রিন্ট করে নিন।
৫. পাসপোর্ট অফিসে যাওয়া ও ছবি তোলা
Appointment এর দিন, Confirm Copy এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানে আপনার Document Verify করা হবে এবং ছবি তোলা হবে।
- সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে যাওয়াই ভালো, কারণ দিনের বেলা ভিড় একটু বেশি থাকে।
- লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করুন।
- অফিসারের কাছে আপনার Document জমা দিন এবং ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
৬. পাসপোর্ট সংগ্রহ (Passport Collection)
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, আপনার পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন আপনি পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত, পাসপোর্ট তৈরি হতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে।
পাসপোর্ট পেতে কত দিন লাগে?
এটা একটা খুব common question। সাধারণ ক্ষেত্রে, রেগুলার ডেলিভারিতে ১৫-২০ দিন লাগে, আর এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ৭-১০ দিন লাগতে পারে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।
পাসপোর্ট করার জন্য কী কী যোগ্যতা লাগে?
পাসপোর্ট করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা লাগে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। তবে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন।
- আপনার নামে কোনো criminal record থাকা চলবে না।
জরুরি পাসপোর্ট করার নিয়ম
যদি আপনার খুব তাড়াহুড়ো থাকে, তাহলে আপনি জরুরি পাসপোর্ট করতে পারেন। জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে সাধারণ ফি-এর চেয়ে একটু বেশি ফি দিতে হবে। এছাড়া, অন্যান্য নিয়মকানুন একই থাকবে।
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, সেটি রিনিউ করা যায়। রিনিউ করার নিয়মগুলো নিচে দেওয়া হলো:
- অনলাইনে Application Form পূরণ করুন।
- Renewal Fee পরিশোধ করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন: পুরোনো পাসপোর্টের কপি) জমা দিন।
- পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তুলুন (যদি প্রয়োজন হয়)।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৫ : ডকুমেন্টস এর বিস্তারিত তালিকা
পাসপোর্ট করতে কী কী ডকুমেন্টস লাগবে, তার একটা বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- পূরণ করা অনলাইন Application Form
- Payment Slip/Receipt (ফি পরিশোধের প্রমাণ)
- NID অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
- পুরনো পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে)
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ পানির বিলের কপি
- পেশার প্রমাণপত্র (যেমন: Student ID Card, Employee ID Card ইত্যাদি)
- বৈবাহিক অবস্থার সনদ (যদি বিবাহিত হন)
- পিতা ও মাতার NID Card এর ফটোকপি
- অন্যান্য কাগজপত্র (যা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হতে পারে)
পাসপোর্ট করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
পাসপোর্ট করার সময় কিছু জিনিস মনে রাখলে আপনার experience আরও ভালো হবে।
- Application Form পূরণ করার সময় খুব সতর্ক থাকুন। কোনো ভুল তথ্য দেওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন।
- সব Document এর Photocopy নিজের কাছে রাখুন।
- পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার আগে Appointment Confirm Copy এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিতে ভুলবেন না।
- পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
- যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে হেল্পডেস্কের সাহায্য নিন।
অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর
১. পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্টের ফি নির্ভর করে আপনি কত পাতার পাসপোর্ট করছেন এবং এর মেয়াদ কত দিনের হচ্ছে তার ওপর। সাধারণত, ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের ফি ৪,০২৫ টাকা এবং ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের ফি ৫,৭৫০ টাকা। জরুরি পাসপোর্ট করতে চাইলে ফি আরও বেশি হবে।
২. পাসপোর্ট করতে কি পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে?
সাধারণত, পাসপোর্ট করার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে না। তবে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন যদি আপনার নামে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগতে পারে।
৩. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করব?
যদি আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, তাহলে দ্রুত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (GD) করুন। এরপর GD এর কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
৪. পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম কি?
পাসপোর্টে কোনো ভুল থাকলে, আপনি সেটি সংশোধন করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে একটি Application করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
৫. পাসপোর্ট করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?
পাসপোর্ট করার জন্য আপনার NID Card অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ, Application Form, Payment Receipt, ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল অথবা গ্যাস বিলের কপি, এবং পেশার প্রমাণপত্র লাগবে।
৬. পাসপোর্ট বানানোর জন্য কি কি লাগে?
পাসপোর্ট বানানোর জন্য আপনার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণ, ছবি, Application Form, এবং ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র লাগবে।
৭. নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
নতুন পাসপোর্ট করার জন্য আপনার NID Card অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ, Application Form, Payment Receipt, ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল অথবা গ্যাস বিলের কপি, এবং পেশার প্রমাণপত্র লাগবে।
৮. পাসপোর্ট করতে পিতার নাম লাগে?
হ্যাঁ, পাসপোর্ট Application Form এ আপনার পিতার নাম উল্লেখ করতে হবে।
৯. পাসপোর্ট করতে কি জন্ম নিবন্ধন লাগে?
যদি আপনার NID Card না থাকে, তাহলে আপনি জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে পারবেন৷
১০. পাসপোর্ট আবেদন করার কত দিন পর ফি জমা দিতে হয়?
পাসপোর্ট এর অনলাইন আবেদন করার সাথে সাথেই ফি জমা দেওয়া ভালো।
১১. পাসপোর্ট তৈরি হতে কত দিন লাগে?
সাধারণত, পাসপোর্ট তৈরি হতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ৭-১০ দিন লাগতে পারে।
পাসপোর্ট করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। অনলাইনে সবকিছু করার সুযোগ থাকার কারণে, আপনি ঘরে বসেই Application করতে পারবেন এবং খুব সহজেই পাসপোর্ট পেতে পারেন। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে পাসপোর্ট করার পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে সাহায্য করেছে। যদি আপনার মনে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।