দরকারি

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট করবো কিভাবে? টিকিট কাটার নিয়ম ধাপে ধাপে জেনে নিন

5/5 - (1 vote)

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট করবো কিভাবে? আজকাল বাসের থেকে ট্রেনে যাতায়াত করা অনেক বেশি আরামদায়ক। যানজটের ঝামেলা নেই, ধাক্কাধাক্কি নেই, আর সময়ও বাঁচে অনেকটা। কিন্তু ট্রেনের টিকিট কাটার সেই লম্বা লাইনে দাঁড়ানোটা যেন এক বিশাল ঝক্কি! তাই না?

আসলে, এখন আর লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ! আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেন। ভাবছেন, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট করবো কিভাবে? চিন্তা নেই, আমি আছি আপনার সাথে। এই ব্লগপোস্টে আমি আপনাদের অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে বলবো, একদম জলের মতো সোজা করে। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!

অনলাইনের ট্রেনের টিকিট করবো কিভাবে?
অনলাইনের ট্রেনের টিকিট করবো কিভাবে?

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম : ধাপে ধাপে গাইড

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়াটিকে কয়েকটি সহজ ধাপে ভাগ করা যায়। নিচে প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা

প্রথম ধাপ হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। এটি করার জন্য:

  • প্রথমে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে যান: https://eticket.railway.gov.bd
  • “Register” অপশনে ক্লিক করুন।
  • আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেল এড্রেস ইত্যাদি দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।
  • একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং সেটি মনে রাখুন।
  • সবশেষে, “Submit” বাটনে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট তৈরি সম্পন্ন করুন।

আপনার দেওয়া মোবাইল নম্বর এবং ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। সেই কোড দিয়ে অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাই করে নিন।

২. টিকিট কেনার জন্য লগইন করা

অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে, এবার টিকিট কাটার পালা।

  • আপনার ইউজারনেম (সাধারণত মোবাইল নম্বর) এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
  • লগইন করার পর, আপনার ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবেন।

যদি আপনি আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তবে “Forget Password” অপশনে ক্লিক করে পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

৩. গন্তব্য এবং তারিখ নির্বাচন করা

লগইন করার পরে, আপনাকে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু তথ্য দিতে হবে।

  • “From Station” অপশনে আপনি যে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করতে চান, সেটি নির্বাচন করুন।
  • “To Station” অপশনে আপনার গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করুন।
  • “Journey Date” অপশনে আপনি কোন তারিখে ভ্রমণ করতে চান, সেটি নির্বাচন করুন।
  • যদি আপনি ফিরতি টিকিট কাটতে চান, তবে “Return Date” অপশনে ফেরার তারিখ নির্বাচন করুন। (এটা বাধ্যতামূলক নয়)

৪. ট্রেনের তালিকা এবং আসন availability দেখা

আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর একটি তালিকা দেখানো হবে।

  • তালিকা থেকে আপনার পছন্দসই ট্রেনটি নির্বাচন করুন।
  • ট্রেনের নাম এবং ছাড়ার সময় ভালো করে দেখে নিন।
  • “View Seats” অপশনে ক্লিক করে সেই ট্রেনের আসন availability দেখতে পারেন।

এখানে আপনি বিভিন্ন ক্লাসের (যেমন এসি, প্রথম শ্রেণি, শোভন ইত্যাদি) আসন দেখতে পাবেন। কোন ক্লাসে কতগুলো আসন খালি আছে, তা দেখে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করুন।

৫. আসন নির্বাচন এবং যাত্রী তথ্য দেওয়া

আসন availability দেখার পর, আপনার পছন্দসই আসনটি নির্বাচন করুন।

  • “Select Seat” অপশনে ক্লিক করে আসন নির্বাচন করুন।
  • যাত্রীদের তথ্য যেমন নাম, বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
  • মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস অবশ্যই দিতে হবে, কারণ টিকিটের তথ্য এইগুলোতে পাঠানো হবে।

যদি আপনি একাধিক টিকিট কাটেন, তবে প্রত্যেক যাত্রীর তথ্য আলাদাভাবে দিতে হবে।

৬. মূল্য পরিশোধ করা

সব তথ্য দেওয়ার পর, আপনাকে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

  • বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ) ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
  • আপনার সুবিধা অনুযায়ী একটি অপশন নির্বাচন করুন।
  • পেমেন্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন কার্ড নম্বর, CVV, পিন নম্বর ইত্যাদি) দিন এবং proceed করুন ।

পেমেন্ট করার সময় একটু সতর্ক থাকুন, যাতে কোনো ভুল না হয়।

৭. ই-টিকিট ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা

সফলভাবে পেমেন্ট করার পর, আপনার ই-টিকিট তৈরি হয়ে যাবে।

  • ই-টিকিটটি ডাউনলোড করার অপশন পাবেন।
  • ডাউনলোড করে টিকিটটি প্রিন্ট করে নিন।

যদি প্রিন্টার না থাকে, তবে আপনি আপনার মোবাইল ফোনে টিকিটের স্ক্রিনশট রাখতে পারেন। তবে, যাত্রা করার সময় অবশ্যই টিকিটের একটি প্রিন্ট কপি সাথে রাখতে চেষ্টা করুন।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সুবিধা

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার অনেক সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • সময় সাশ্রয়: লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার ঝামেলা থেকে মুক্তি।
  • যেকোনো স্থান থেকে টিকিট: ঘরে বসেই টিকিট কাটার সুবিধা।
  • সহজলভ্যতা: ২৪ ঘণ্টা টিকিট কাটার সুযোগ।
  • পেমেন্টের সুবিধা: বিভিন্ন মাধ্যমে পেমেন্ট করার সুযোগ।
  • আসন নির্বাচন: নিজের পছন্দ অনুযায়ী আসন বেছে নেওয়ার সুবিধা।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য আপনার কিছু জিনিসপত্র হাতের কাছে রাখতে হবে। যেমন:

  • একটি সচল মোবাইল অথবা কম্পিউটার।
  • ইন্টারনেট সংযোগ।
  • একটি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড অথবা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট (বিকাশ, রকেট, নগদ)।
  • যাত্রীদের সঠিক তথ্য (নাম, বয়স ইত্যাদি)।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সময় কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। নিচে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো:

  • সবসময় বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কাটুন। অন্য কোনো সাইট থেকে টিকিট কাটলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • টিকিট কাটার আগে সময়সূচি এবং স্টেশনের নাম ভালোভাবে দেখে নিন।
  • পেমেন্ট করার সময় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদে রাখুন।
  • টিকিট ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করতে ভুলবেন না।
  • যাত্রা করার সময় অরিজিনাল আইডি কার্ড (যেমন জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন সনদ) সাথে রাখুন।

ই-টিকিট হারিয়ে গেলে কি করবেন?

যদি আপনার ই-টিকিট হারিয়ে যায়, তবে চিন্তা করার কিছু নেই। আপনি পুনরায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে লগইন করে আপনার টিকিট ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া, আপনি হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে সাহায্য নিতে পারেন।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট করবো কিভাবে? প্রয়োজনীয় তথ্য

আমি কি আমার মোবাইল ফোন দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবো?

অবশ্যই! বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে মোবাইল-ফ্রেন্ডলি করে ডিজাইন করা হয়েছে। আপনি খুব সহজেই আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে টিকিট কাটতে পারবেন। এছাড়াও, তাদের ডেডিকেটেড মোবাইল অ্যাপও রয়েছে, যা ব্যবহার করে আপনি আরও সহজে টিকিট কাটতে পারবেন।

আমি কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের মূল্য পরিশোধ করবো?

বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন দিয়ে থাকে, যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, এবং মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ)। আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি অপশন ব্যবহার করে মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।

অনলাইনে টিকিট কাটার পর, আমি কি টিকিট পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারবো?

হ্যাঁ, আপনি অনলাইনে টিকিট কাটার পর কিছু শর্তসাপেক্ষে টিকিট পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারবেন। তবে, টিকিট বাতিল করার ক্ষেত্রে কিছু চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে। বিস্তারিত জানার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে টার্মস এন্ড কন্ডিশন দেখে নিতে পারেন।

আমি যদি অনলাইনে টিকিট কাটতে সমস্যা অনুভব করি, তাহলে কি করবো?

যদি আপনি অনলাইনে টিকিট কাটতে কোনো সমস্যা অনুভব করেন, তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি আপনাকে সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত।

একটি আইডি দিয়ে কয়টি টিকিট কাটা যায় ?

একটি আইডি দিয়ে আপনি সাধারণত ৪টি টিকিট কাটতে পারবেন। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে এই সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে।

অগ্রিম টিকিট কত দিন আগে পাওয়া যায়?

সাধারণত, যাত্রা করার ৫ দিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট পাওয়া যায়।

তৎকাল টিকিট কি অনলাইনে পাওয়া যায়?

কিছু কিছু রুটে তৎকাল টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায়।

ই-টিকিট কি দেখানো যাবে? নাকি প্রিন্ট করতেই হবে?

ই-টিকিট দেখালেই হবে, তবে প্রিন্ট করা ভালো। মাঝে মাঝে নেটওয়ার্ক এর অভাবে বিড়ম্বনায় পরতে হতে পারে।

AC chair এবং Snigdha এর মধ্যে পার্থক্য কি?

“AC chair” এবং “Snigdha” মূলত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (AC) বসার আসন। “Snigdha” সাধারণত “AC chair” এর থেকে বেশি আরামদায়ক হয়ে থাকে এবং এর ভাড়া তুলনামূলকভাবে একটু বেশি।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি রোধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি রোধে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো NID কার্ডের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং একটি আইডি দিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট কাটার নিয়ম। এছাড়াও, নিয়মিত সার্ভার মনিটরিং করা হয় এবং সন্দেহজনক activity দেখলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

টিকিট করার সময় NID নম্বর কি বাধ্যতামূলক?

হ্যাঁ, বর্তমানে ট্রেনের টিকিট কাটার সময় NID নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হটলাইন নম্বর

যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন:

যোগাযোগের বিষয় হটলাইন নম্বর
সাধারণ জিজ্ঞাসা ১৬১৮১
অভিযোগ ১৩১
ই-টিকিট সংক্রান্ত ০৩৩-২৬৮১৪০, ২৩২৬৮১২৫

এই নম্বরগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

তাহলে এই ছিল অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সম্পূর্ণ গাইড। আশা করি, এই ব্লগপোস্টটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে এবং আপনারা খুব সহজেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন। টিকিট কাটার সময় কোনো সমস্যা হলে, বাংলাদেশ রেলওয়ের হেল্পলাইন নম্বর অথবা আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।

Related Articles

Back to top button