গ্যালাক্সির তৌফিক উদ্দিন পেলেন ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’
লাখো মানুষের গন্তব্য নির্ধারণ করে যিনি গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের আধুনিক ভ্রমণ-ইতিহাস, সেই মানুষটি আজ পেলেন সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। এভিয়েশন ও পর্যটনখাতে পাঁচ দশকের অগ্রণী পথচলার জন্য গ্যালাক্সি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তৌফিক উদ্দিন আহমেদকে দেওয়া হলো ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে তৌফিক আহমেদের হাতে যখন পুরস্কার তুলে দেওয়া হলো, তখন কেবল একজন ব্যক্তির অর্জন নয়, বরং পুরো বাংলাদেশি ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের একটি যুগের স্বীকৃতি ছড়িয়ে পড়ল হলজুড়ে।
অনুষ্ঠানটি ছিল ‘শেয়ার ট্রিপ – মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার ২০২৪’। এটি দেশের একমাত্র পুরস্কার যা এভিয়েশন, ভ্রমণ ও পর্যটন খাতকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়। বিচারক প্যানেল বলেছে, “তৌফিক উদ্দিন আহমেদের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অগ্রণী ভূমিকা দেশের ভ্রমণশিল্পের রূপান্তরে মৌলিক অবদান রেখেছে।”
১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। রাজধানীর দিলকুশার এক ছোট্ট অফিসে শুরু হয় ‘গ্যালাক্সি ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল’-এর পথচলা। প্রতিষ্ঠাতা তৌফিক আহমেদের ছিল শুধু একটি স্বপ্ন—বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা।
কালের পরিক্রমায় তাঁর নেতৃত্বেই গ্যালাক্সি হয়ে ওঠে দেশের কর্পোরেট ভ্রমণ খাতের অন্যতম প্রবর্তক। সরকারি সংস্থা থেকে বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যাংক, NGO—সবাই তাদের ভ্রমণ আস্থার সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় গ্যালাক্সিকে।
একটি সময়ে গ্যালাক্সি হয়ে ওঠে এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার হাত ধরেই বহু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করে। কাতার এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারওয়েজ, স্পাইসজেট, সৌদিয়া, ওমান এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ—এদের বাংলাদেশের জেনারেল সেলস এজেন্ট (GSA) হিসেবে কাজ করেছে গ্যালাক্সি। আর সেই সেতুবন্ধনের কারিগর ছিলেন তৌফিক আহমেদ।
তৌফিক আহমেদ নিজের প্রতিষ্ঠানকে শুধু ব্যবসা নয়, বরং ভ্রমণসেবা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন। তিনি তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে টিওএবি (ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক হিসেবে এটিএবি (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ)-এ নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তাঁর একনিষ্ঠতা এবং দূরদর্শিতা নীতিনির্ধারণে, শিল্প মানোন্নয়নে এবং বেসরকারি এভিয়েশন খাতের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশের হাজারো মানুষের বিদেশ ভ্রমণের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গ্যালাক্সি শুরু করে ভিসা সার্ভিস সেন্টার, যেখানে VFS Global-এর মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারের সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশের ভিসা সেবা সহজ করে তোলা হয়। এই উদ্যোগ ভ্রমণপ্রেমী সাধারণ নাগরিকদের জন্য এনে দেয় সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য ভিসা প্রক্রিয়ার সুবিধা।
এই সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত তৌফিক আহমেদ বলেন,
“এই পুরস্কার শুধুমাত্র আমার একার নয়—এটি গ্যালাক্সি পরিবারের প্রতিটি সদস্য, আমাদের এয়ারলাইনস পার্টনার, সরকারি সংস্থা এবং প্রতিটি সহযাত্রীর সম্মিলিত শ্রম ও নিষ্ঠার ফসল। আমরা চাই আরও দক্ষ, টেকসই এবং ভবিষ্যতমুখী ভ্রমণ শিল্প গড়ে তুলতে।”
এখনো তৌফিক আহমেদ থেমে যাননি। তিনি কাজ করছেন হেলথ ট্যুরিজম বা চিকিৎসা-ভিত্তিক পর্যটনের উন্নয়নে। তাঁর লক্ষ্য—বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
একজন মানুষ, এক দৃষ্টিভঙ্গি, এক প্রতিষ্ঠান—এই তিনটি শক্তির সম্মিলনেই রচিত হয়েছে বাংলাদেশের আধুনিক পর্যটনের এক নতুন অধ্যায়। তৌফিক আহমেদ কেবল একটি সফল ব্যবসার প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি হলেন বাংলাদেশের গন্তব্যভিত্তিক উন্নয়নের অন্যতম রূপকার।