মেটা এআই-এ ১০০ কোটির মাইলফলক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) জগতে দারুণ এক মাইলফলকে পৌঁছেছে মার্ক জাকারবার্গের মেটা এআই। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় মেটার সিইও জাকারবার্গ ঘোষণা দেন, মেটা এআই এখন মাসে ১০০ কোটিরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছেছে।
এই সংখ্যা প্রযুক্তি খাতে শুধু রেকর্ড নয়, বরং এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের ব্যবহার কতটা দ্রুত মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠছে—তার এক চমৎকার প্রমাণ।

কয়েক মাসেই দ্বিগুণ ব্যবহারকারী
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা শুরু করা মেটা এআই প্রথমে যুক্ত হয় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মতো প্ল্যাটফর্মে। এরপর একে একে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপেও যুক্ত হয় এটি।
প্রথম দিকে ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫০ কোটির মতো থাকলেও, ২০২৪ সালের জুনে ভারতে প্রযুক্তিটি উন্মুক্ত হতেই এক লাফে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ভারতের বিশাল হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী বেস এই প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।
টেকক্রাঞ্চ জানায়, ভারতে উন্মুক্ত হওয়ার এক মাসের মধ্যেই মেটা এআই-এর ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়ে যায় এবং এটি ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় এআই বাজারে পরিণত হয়।
শুধু চ্যাট নয়, অনেক কিছু
মেটা এআই এখন আর শুধু সাধারণ প্রশ্নোত্তরের টুল নয়। এটি:
- রেস্তোরাঁ খোঁজার পরামর্শ দিতে পারে
- ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাতে সহায়তা করে
- শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্ন তৈরি করতে পারে
- ভয়েস কমান্ড গ্রহণ করে
- পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো কাজ করে
- মেসেজের মধ্যে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও সাজেশন দেয়
- চিত্র ও গ্রাফ তৈরি করতেও সক্ষম
এই সব ফিচারকে একত্র করে এবার মেটা একটি স্ট্যান্ডঅ্যালোন (স্বতন্ত্র) এআই অ্যাপ চালু করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সরাসরি AI-এর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারবেন।
পেইড ফিচার চালুর ইঙ্গিত
যদিও এখনই মেটা এআই থেকে আয় করাকে লক্ষ্য হিসেবে দেখছে না প্রতিষ্ঠানটি, তবে ভবিষ্যতে সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক পেইড ফিচার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
মার্ক জাকারবার্গ বলেন, “আমরা মেটা এআইকে আরও পার্সোনালাইজড, ব্যবহারবান্ধব ও শক্তিশালী ডিজিটাল সহকারী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এটি থেকে এখন আয় নয়, বরং প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ তৈরিই আমাদের লক্ষ্য।”
তবে তিনি জানান, ভবিষ্যতে ‘পেইড রেকমেন্ডেশন’ বা কিছু প্রিমিয়াম ফিচার সাবস্ক্রিপশনের আওতায় আনা হতে পারে। এ ধরণের পদক্ষেপ মেটা-কে সরাসরি চ্যাটজিপিটি বা গুগল জেমিনির মতো জনপ্রিয় AI প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতিযোগী করে তুলবে।
প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখনই বড় কোনো প্ল্যাটফর্ম পেইড ফিচার চালু করে, তখন বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার মাত্রা বাড়ে। কার এআই বেশি পার্সোনাল, কার সেবা দ্রুত ও নির্ভুল—এসব দিক বিচার করে ব্যবহারকারীরা পছন্দ করবে কাকে। ফলে মেটা, ওপেনএআই, গুগল, অ্যামাজনের মতো জায়ান্টদের মধ্যে নতুন এক এআই যুদ্ধের সূচনা হতে যাচ্ছে।
ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা
অনেকেই বলছেন, মেটা এআই ব্যবহারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—এটি মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামের মতো পরিচিত প্ল্যাটফর্মে সরাসরি এক্সেসযোগ্য। আলাদা করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় না বা নতুন অ্যাপ ডাউনলোডের প্রয়োজন পড়ে না।
শুধু চ্যাটবক্সে প্রশ্ন করলেই মেটা এআই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারে, এমনকি ছবিও তৈরি করতে পারে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, “এক বিলিয়ন ব্যবহারকারী শুনতে বিশাল মনে হলেও আমাদের কাছে এটি কেবল শুরু। আমরা এআই প্রযুক্তিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যা ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।”
মেটা এআই-এর ১০০ কোটি ব্যবহারকারীর মাইলফলক কেবল সংখ্যা নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যবহারের প্রমাণ।
যেভাবে মেটা এআই একাধিক অ্যাপে একীভূত হয়েছে, ভবিষ্যতে সেটি আমাদের জীবনের আরো বেশি ক্ষেত্র দখল করে নিতে পারে—হোক তা পড়াশোনা, ভ্রমণ পরিকল্পনা, বা কর্মক্ষেত্রের কাজ।
এখন দেখার বিষয়, পেইড মডেল চালু হলে ব্যবহারকারীরা কেমন সাড়া দেয় এবং প্রতিযোগিতায় কে এগিয়ে যায়—মেটা না চ্যাটজিপিটি?