৫ বছরের মধ্যে চাকরির বাজারে বড় পরিবর্তন আনবে এআই
একসময় ইন্টারনেট এসে বদলে দিয়েছিল আমাদের যোগাযোগ, তথ্য ও কাজের ধারা। এরপর স্মার্টফোন মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল জগৎ। আর এখন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে আরও এক ধাপ—পরিবর্তন আনতে চলেছে চাকরির বাজারে, জীবনধারায় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে।
গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস সম্প্রতি এমনই এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাঁর মতে, আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যেই এআই পুরোপুরি বদলে দেবে পেশাজগৎ।
“যেমন করে ইন্টারনেট বদলেছে মিলেনিয়ালদের জীবন, আর স্মার্টফোন পরিবর্তন এনেছে জেনারেশন জেড-এ, তেমনি জেনারেশন আলফার ভবিষ্যৎ নির্মাণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে এআই।”
এই কথা তিনি বলেছেন প্রযুক্তি বিষয়ক জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘হার্ড ফর্ক’-এ অংশ নিয়ে, যা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টুডে।

কেন এআই শেখা জরুরি?
ডেমিস হাসাবিস মনে করেন, যারা এখন থেকেই এআই শেখা শুরু করবে এবং তার ব্যবহার রপ্ত করবে, তারাই ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে এগিয়ে থাকবে। কারণ, এই প্রযুক্তি শুধু কিছু নতুন সুবিধা নিয়ে আসছে না—এটি পুরো পেশাজীবন ও শ্রমবাজারের চেহারা বদলে দেবে।
তিনি বলেন,
“চাকরির অনেক কাজ এআই দ্বারা সহজে করা সম্ভব হবে। কিছু চাকরি হারিয়ে যাবে, আবার অনেক নতুন পেশার জন্ম হবে, যার ধারণাও আমাদের আজকের দিনে নেই।”
তাই, আজকের কিশোর-কিশোরীদের উচিত সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই এআই, প্রোগ্রামিং, এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা। শুধু ব্যবহার নয়, কীভাবে এটি কাজ করে তা বোঝার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
শেখার ক্ষেত্র হতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর
ডেমিস হাসাবিস মনে করেন, ভবিষ্যতের প্রজন্মকে শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের শেখাতে হবে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির গভীরতা বোঝার দক্ষতা।
তিনি বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা যেন শুধু পরীক্ষার ফলাফল অর্জনে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এই সময়েই ছাত্রছাত্রীরা যেন ফ্রি সময় কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে পড়াশোনা করে, টুলস ব্যবহার করে, নিজের মতো করে কিছু তৈরি করে।”
তাঁর মতে, ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন হবে চারটি মূল শিক্ষাক্ষেত্রের—বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM)—ভিত্তির ওপর গড়া শিক্ষা এবং পাশাপাশি মানুষের নরম দক্ষতাও। যেমন:
- শেখার আগ্রহ
- মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা
- সৃজনশীলতা
- বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাভাবনা
মেশিনের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান
ডিপমাইন্ডের সিইওর মতে, আগামী দশকের মধ্যেই তারা এমন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে সক্ষম হবে, যা মানুষের মতো সাধারণ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে পারবে—যাকে বলা হয় Artificial General Intelligence (AGI)।
এই প্রযুক্তি এমনভাবে কাজ করবে যেন মানুষই চিন্তা করছে। একারণে ভবিষ্যতে মানুষকে এআই-এর সহকর্মী হিসেবেই ভাবতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।
তিনি আরও বলেন,
“এআই এখন কেবল ভবিষ্যৎ নয়—এটি আমাদের বর্তমান। এটি এখনই আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে—কাজের ধরন, যোগাযোগের মাধ্যম, তথ্য বিশ্লেষণ—সবই বদলে যাচ্ছে।”
তরুণদের জন্য চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার যুগ
২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকেই এআই নিয়ে আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি শুরু হয়েছে ভয়ের আবহ। অনেকে ভাবছে, চাকরি থাকবে তো?
এই প্রশ্নের উত্তরে হাসাবিস বলেন, “হ্যাঁ, কিছু চাকরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। তবে প্রযুক্তি সবসময়ই নতুন পথ খুলে দিয়েছে। যারা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, তাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”
তাঁর মতে, আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তরুণদের এই প্রযুক্তি শেখানো, তাদের আগ্রহী করে তোলা উদ্ভাবনে, আর শেখানো—মানুষের কাজ কীভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে মিশে যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: আগামীতে চাকরি হারানোর আশঙ্কা কতটা বাস্তব? উত্তর: হ্যাঁ, কিছু নির্দিষ্ট রুটিনভিত্তিক চাকরি হারানোর সম্ভাবনা আছে। তবে তার জায়গায় তৈরি হবে নতুন ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর পেশা।
প্রশ্ন ২: তরুণদের কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে? উত্তর: এখন থেকেই এআই শেখা, কোডিং শেখা, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা এবং নিজস্ব প্রজেক্ট তৈরি করা উচিত। পাশাপাশি শেখা উচিত সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তা।
প্রশ্ন ৩: এআই কি শুধু ভবিষ্যতের প্রযুক্তি? উত্তর: না, এটি এখনকার বাস্তবতা। ইতোমধ্যেই চিকিৎসা, সাংবাদিকতা, ব্যবসা, শিক্ষা—সব জায়গায় এর প্রভাব পড়ছে।
প্রশ্ন ৪: সবাই কি এআই শিখতে পারবে? উত্তর: হ্যাঁ, এখন অনলাইনে বহু ফ্রি রিসোর্স ও কোর্স রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ধাপে ধাপে শেখা সম্ভব। আগ্রহ ও অধ্যবসায় থাকলে সবাই পারবে।
যারা আজ শিখবে, তারাই আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে
ডেমিস হাসাবিসের বক্তব্য তরুণদের সামনে একটা স্পষ্ট বার্তা রেখে গেছে—ভয় নয়, প্রস্তুতি নাও। প্রযুক্তিকে গ্রহণ করো, শেখো, গঠন করো। যে যত বেশি জানবে, তার কাছে তত বেশি সুযোগ ধরা দেবে।
এআই আমাদের কর্মসংস্থানের কাঠামো পাল্টে দেবে ঠিকই, কিন্তু যারা দ্রুত অভিযোজিত হতে জানে, পরিবর্তন মেনে নিতে পারে, শেখার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে—তাদের জায়গা কখনও হারিয়ে যাবে না।
এখন সময় এসেছে—তরুণদের প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার।